সুন্নত.ইনফো ×

সিরকা- একটি সুন্নতী খাবার। ডায়াবেটিক, গ্যাস্ট্রিক সহ অনেক রোগের জন্য উপকারী

সিরকা- একটি সুন্নতী খাবার। ডায়াবেটিক, গ্যাস্ট্রিক সহ অনেক রোগের জন্য উপকারী

উপকারিতা:

১. সিরকা খেলে দ্রুত দেহের ওজন কমে

২. ব্রণ ও রোদে পোড়া ভাব দূর করে

৩. ক্ষুধা কম লাগে

৪. পেটের চর্বি কমায়

৫. উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে

৬. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী

৭. ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করে

৮. হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়াসহ অন্ত্রের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেয়।

খাওয়ার নিয়ম:

১. এক চা চমচ সিরকা ১ কাপ পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। চাইলে পানির পরিমান বাড়ানো যাবে।

২. দিনে একবার যথেষ্ট প্রাথমিক ভাবে। স্বাদের সাথে অভ্যস্থ হয়ে গেলে দিনে তিন বার পর্যন্ত খেতে পারেন।

৩. ২ টেবিল চামচ সিরকা আধা কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে সকালে রক্তে শর্করা প্রায় ৪ থেকে ৬ শতাংশ কমে।

৪. মাথা ধরলে এক টেবিল চামচ সিরকা আর কয়েক ফোঁটা মধু এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।

৫. চর্বিযুক্ত খাবার রান্নার সময় কিছু সিরকা ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায়।

৬. রান্নার সময় গোশতে একটু সিরকা মিশিয়ে দিন, গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

৭. আচার তৈরির সময় সিরকা ব্যবহার করলে, সেই আচার অনেকদিন ভালো থাকে; তাতে পচন ধরে না।

৮. রান্নার পর যদি দেখা যায় ঝাল বেশি হয়েছে, তখন খানিকটা সিরকা মিশিয়ে দিন। দেখবেন ঝালের তীব্রতা কমে যাবে।

৯. সিরকা খাবারকে সুস্বাদু করার পাশাপাশি এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, এর উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

১০. আলু রান্নার আগে আপনি প্রথমে সিরকাযুক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর রান্নার সময় পাত্রে আলু দেয়ার পর, আপনি পর্যাপ্ত সিরকা দিন। তারপর দেখবেন রান্না করা আলু মুখে দিলে কেমন মিশে যাবে!

১১. গরু বা ছাগলের গোশত রান্নার সময় ব্যবহার করলে, রান্না দ্রুত শেষ হবে। সিরকা ছাড়া রান্না করলে এক্ষেত্রে যে সময় লাগবে, সিরকা ব্যবহার করলে সে সময় অর্ধেকে নেমে আসবে।

১২. রান্নার সময় মাছ বা গোশতের হাড় নরম হতে

সাহায্য করে সিরকা।

সিরকার বিভিন্ন ব্যবহার

সিরকার সাথে লেবু,

সিরকার সাথে সোডা,

সিরকার সাথে সোডা ও লেবু

১. আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানান রান্নায় সিরকা (সিরকা) ব্যবহৃত হয়। সিরকা হলো এক ধরনের তরল পদার্থ। রান্না, আচার কিংবা সালাদ বানানো ইত্যাদি অনেক কিছুতেই সিরকা ব্যবহার করা হয় অহরহ। রান্না ছাড়াও বিভিন্ন গৃহস্থালি কাজে কিংবা কোনো কিছু পরিষ্কার করতেও সিরকা ব্যবহার করা হয়। ভিনেগারের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে।

২. পিঁপড়ের যন্ত্রণায় অনেক সময় ফ্রিজের বাইরে খাবার রাখা যায় না। কিন্তু ফ্রিজের খাবার খেতে তেমন ভালো লাগে না। এই সমস্যা সমাধান করবে সিরকা। একটি স্প্রে বোতলে অর্ধেক পানি এবং অর্ধেক সিরকা নিয়ে ঝাঁকিয়ে নিন। এরপর যেখানে পিঁপড়ের আনাগোনা বেশি সেই সকল স্থানে স্প্রে করে দিন। ব্যস পিঁপড়ের সমস্যা একেবারে সমাধান।

৩. কোনো জিনিসের গায়ে লেগে থাকা কাগজের স্টিকার বেশ বিরক্তিকর। এটি তুলতে সাহায্য করবে সিরকা। একটি পাত্রে সামান্য সিরকা গরম করুন। এরপর এই গরম সিরকা একটি পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে স্টিকারের গায়ে লাগান। স্টিকারটি ভালো করে ভিজে গেলে আস্তে করে টান দিয়ে স্টিকার তুলে ফেলুন।

৪. অনেক সময়ই খাবার ভুলক্রমে পচে যায় বাটিতে। বাটি ধোঁয়ার পরেও এই খাবার পচা গন্ধ যেতে চায় না। এই পচা গন্ধ দূর করতে চাইলে একটি কাপড়ে সিরকা লাগিয়ে তা বাটিতে রেখে দিন ঘণ্টাখানেক। সিরকা পচা গন্ধ দূর করে দেবে।

৫. বাসনপত্রে কিংবা রান্নার প্যানে অনেক সময় তেল চিটচিটে ভাব চলে আসে যা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু ভিনেগারের মাধ্যমে এই তেল চিটচিটে ভাব দূর করতে পারবেন সহজেই। একটি মাজুনিতে সিরকা দিয়ে বাসন বা প্যানটি মেজে নিন। ৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন তেল চিটচিটে ভাব একদম নেই।

৫. মাছের আঁশ ছাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু এই কষ্টসাধ্য কাজটিও সহজ করবে সিরকা। মাছের গায়ে কিছু সাদা সিরকা ঘষে লাগিয়ে দিন। ৫ মিনিট পর থেকে আঁশ ছাড়ানো শুরু করুন। দেখবেন বেশ সহজেই উঠে আসছে।

৭. যারা চামড়ার জিনিস ব্যবহার করেন তারা চামড়ায় সাদা সাদা ছিতি পরার সমস্যায় পড়েন। এই সমস্যারও সমাধান করবে সিরকা। ১/২ টেবিল চামচ সিরকা নিয়ে এতে সামান্য তিসির তেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিয়ে চামড়ার জিনিসটি ঘষে নিন। দেখবেন নতুনের মতো চকচকে হয়ে গিয়েছে।

৮. যারা বাগান করতে পছন্দ করেন তারা আগাছার উপদ্রবের কথা ভালো করেই জানেন। এই আগাছার উপদ্রব থেকে বাঁচতে চাইলে একটি স্প্রে বোতলে সিরকা নিয়ে আগাছার গোঁড়ায় স্প্রে করে দিন। দেখবেন আগাছা দূর হয়ে গিয়েছে কিছুদিনের মধ্যেই।

সিরকার আরবি শব্দ خَلٌ (খল) যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। আর ইংরেজিতে VINEGAR (সিরকা) হিসেবে পরিচিত। সিরকা হল এক ধরণের বর্ণহীন তরল যা সাধারনত রান্নার কাজে বা খাদ্যে স্বাদ বাড়াতে ও পচনরোধে ব্যবহার করা হয়। সিরকা ইতিহাসের প্রাচীন খাবার সমূহের মধ্যে অন্যতম।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত

রয়েছে, 

عَنْ حَضْرَتْ مُـحَمَّدِ بْنِ زَاذَانَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهُ حَدَّثَهُ قَالَ حَدَّثَتْنِي حَضْرَتْ اُمُّ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَاَنَا عِنْدَهَا فَقَالَ‏ هَلْ مِنْ غَدَاءٍ‏ قَالَتْ عِنْدَنَا خُبْزٌ وَتَـمْرٌ وَخَلٌّ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نِعْمَ الاِدَامُ الْـخَلُّ اللّٰهُمَّ بَارِكْ فِي الْـخَلِّ فَإِنَّهُ كَانَ اِدَامَ الاَنْبِيَاءِ قَبْلِي وَلَـمْ يَفْتَقِرْ بَيْتٌ فِيْهِ خَلٌّ‏. 

অর্থ: “হযরত উম্মে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক নিলেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতে আমি উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সকালের নাস্তা আছে কি? উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমাদের নিকট রুটি, খেজুর ও সির্কা আছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইরশাদ মুবারক করেছেন, সিরকা কতোইনা উত্তম খাদ্য, হে মহান আল্লাহ পাক! সিরকার উপর আপনার অশেষ রহমত কেননা এটি আমার পূর্ববর্তী নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও খাদ্য ছিল এবং যে ঘরে সিরকা থাকবে সে ঘর কখনো দারিদ্রতার মুখ দেখবেনা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৩১৮) 

অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- 

حَضْرَتْ طَلْحَةُ بْنُ نَافِعٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهُ سَـمِعَ حَضْرَتْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ يَقُوْلُ اَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِيْ ذَاتَ يَوْمٍ اِلَى مَنْزِلِهِ فَأَخْرَجَ اِلَيْهِ فِلَقًا مِنْ خُبْزٍ فَقَالَ مَا مِنْ اُدُمٍ فَقَالُوْا لَا اِلَّا شَىْءٌ مِنْ خَلٍّ‏ قَالَ‏ فَاِنَّ الْـخَلَّ نِعْمَ الْاُدُمُ‏ قَالَ حَضْرَتْ جَابِرٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَمَا زِلْتُ اُحِبُّ الْـخَلَّ مُنْذُ سَـمِعْتُهَا مِنْ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ طَلْحَةُ مَا زِلْتُ اُحِبُّ الْـخَلَّ مُنْذُ سَـمِعْتُهَا مِنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ‏.‏ 

অর্থ: “হযরত ত্বলহা ইবনে নাফি’ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলতে শুনেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার আমার হাত ধরে স্বীয় হুজরা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এক খণ্ড রুটি পেশ করা হলে তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন তরকারী কি নেই? উনারা বললেন, না। তবে অল্প কিছু সিরকা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সিরকা তো ভাল তরকারী। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনার পর আমি সিরকা পছন্দ করতে থাকি। হযরত ত্বলহা ইবনে নাফি’ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমিও হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারর কাছে এ কথা শুনার পর হতে সিরকা পছন্দ করতে লাগলাম।” (মুসলিম শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: বাবু ফাদ্বীলাতিল খ্বল্লি ওয়াত্ তায়াদ্দুমি বিহ্: হাদীছ শরীফ নং ৫২৪৮) 

প্রতি লিটার- ১২০/-