পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করলেন তিনি মূলত মহান আল্লাহ পাক উনারই ইতায়াত করলেন। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করুন এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকুন এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَمَسَّكَ بِسُنَّتِي عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِي فَلَهُ أَجْرُ مِائَةِ شَهِيدٍ
অর্থ: “যিনি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে কোন একটা সুন্নত মুবারক উনাকে আঁকড়িয়ে ধরে রাখবেন, উনাকে একশত শহীদ উনাদের ছাওয়াব প্রদান করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
কেমন একশত শহীদের ছওয়াব? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা ‘আনহুম উনারা সম্মানিত বদর ও সম্মানিত উহুদ জিহাদে শহীদ হয়ে যে রকম মর্যাদা মুবারক হাছিল করেছেন ঠিক সেই রকম মর্যাদা হাছিল করবেন এই আখিরী যামানায় একটা সুন্নত মুবারক আদায় করলেই। সুবহানাল্লাহ! এক হাজার হিজরী শতকের পরবর্তী সময়কে আখেরী যামানা বলা হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ أَحَبَّ سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الجَنَّةِ
অর্থ:“যিনি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারককে মুহব্বত করেন অর্থাৎ অনুসরণ করেন তিনি আমাকেই মুহব্বত মুবারক করেন। আর যিনি আমাকে মুহব্বত মুবারক করেন, তিনি সম্মানিত জান্নাত উনার মধ্যে আমার সাথেই থাকবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ذَالِكَ خَيْرٌ
অর্থ: আর সম্মানিত তাক্বওয়ার পোশাক তথা পবিত্রতম সুন্নতী পোশাকই সর্বোত্তম। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সুরা আ‘রাফ শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ২৬) আর উক্ত তাক্বওয়ার লিবাসই হচ্ছে সুন্নতী পোশাক, যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজে পরিধান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফে, জিহাদে, সফরে, অনুষ্ঠানে, ঈদগাহে, মেহমানদের সাথে সাক্ষাতের সময় তথা সর্বক্ষেত্রে উত্তম ও তাক্বওয়ার পোশাক পরিধান করেছেন। মূলত সেগুলিই সম্মানিত সুন্নতী পোশাক। সুবহানাল্লাহ! সুন্নতী পোশাক সমূহের মধ্যে যেটি দায়েমীভাবে পড়া সুন্নত সেটি হচ্ছে সুন্নতী টুপি মুবারক। সুবহানাল্লাহ! সাধারণত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নুরুল হুদা তথা মাথা মুবারক-এ চার টুকরা বিশিষ্ট সুতি কাপড়ের সাদা রঙয়ের গোল টুপি মুবারক পরিধান করেছেন।
খাছ সুন্নতী টুপি হলো চার টুকরা বিশিষ্ট, গোল, সুতী ও সাদা রংয়ের যা মাথার সাথে লেগে থাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবসময় টুপি মুবারক পরিধান করেছেন। সম্মানিত পাগড়ী মুবারক উনার নিচে এবং সম্মানিত পাগড়ী মুবারক ছাড়া শুধু টুপি মুবারকও পরিধান করেছেন। যা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান উনাদের শি’য়ার বা নিদর্শন। টুপি থাকা সত্ত্বেও অলসতাবশতঃ টুপি পরিধান না করে নামায আদায় করলে নামায মাকরূহ তাহরীমী হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ كَـانَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يلبس القلنسوة البيضاء
অর্থ: হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের টুপি মুবারক পরিধান করতেন। (আল মুখতাছারুল ওফা, মিশকাতুল মাফাতীহ, আত্ তিবরানী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حَضْرَتْ اَبىْ هريرة رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قال رأيت رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قلنسوة بيضاء شامية
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক এ শাম দেশীয় সাদা রংয়ের টুপি মুবারক দেখেছি। (আল মুখতাছারুল ওফা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ام الـمؤمنين حَضْرَتْ عائشة الصديقة عليها السلام كانت له كمة بيضاء
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার টুপি মুবারক ছিল সাদা, গোল।” (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া লিল্ কুস্তলানী, তাহ্ক্বীকুল মাসায়িল)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حَضْرَتْ ابى كبشة رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قال كان كمام اصحاب رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بطحا.
অর্থ: হযরত আবূ কাব্শা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা ‘আনহুমগণ উনাদের টুপি মুবারক ছিল গোল, যা ভালরূপে মাথার সাথে লেগে থাকতো। (তিরমিযী শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি জান্নাত হতে যে টুপি মুবারক হাদিয়া করেছিলেন, তা ছিলো চার টুকরা বিশিষ্ট এবং গোল। (অর্থাৎ উপরে এক টুকরা এবং চারদিকে তিন টুকরা দ্বারা বেষ্টিত), যা সাদা, সুতী এবং মাথার সাথে লেগে থাকে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, ইসরারুল আওলিয়া, আনিসুল আরওয়াহ্, দলিলুল আরেফীন)
কিতাবে উল্লেখ আছে, “হে দরবেশগণ! চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপিই প্রকৃত টুপি। হযরত জিব্রীল আলাইহিস্ সালাম তিনি জান্নাত হতে এ টুপি মুবারক এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিধান করতে দেন এবং বলেন, আপনি পরিধান করুন এবং আপনি যাকে ইচ্ছা উনাকে এ টুপি দান করে আপনার খলীফা নিযুক্ত করুন।” (ইসরারুল আওলিয়া: ১১৯)
বর্ণিত হাদীছ শরীফসমূহ থেকে সুন্নতী টুপির ৫টি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়-
১. চার টুকরা হওয়া
২. গোল হওয়া
৩. সাদা হওয়া
৪. সুতী কাপড়ের হওয়া এবং
৫. মাথার সাথে লেগে থাকা
এই ৫টি সুন্নত মুবারক যেসব টুপিতে নেই সেগুলো কখনোই সুন্নত নয়। সেগুলোতে সম্মানিত সুন্নত উনার ফযীলত হাছিল করা যাবে না। না’ঊযুবিল্লাহ!
যেমন বাজারে প্রচলিত টুপির মধ্যে রয়েছে পাঁচকল্লি, চোকা টুপি, জামাতি (মওদুদি) টুপি, কিস্তি টুপি, জিন্নাহ টুপি, শক্ত টুপি, বুরনুছ বা উঁচু টুপি ইত্যাদি। কাজেই এগুলি থেকে বিরত থেকে সম্মানিত খাছ সুন্নতী টুপি পরিধান করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষদের জন্য আবশ্যক।
টুপির পাশের ৩টি টুকরার যে কোন ১টি সংযোগ/সেলাই মাথার পিছনে মাঝামাঝি অবস্থানে রাখতে হবে। এভাবে পড়ার পর কপালের সামনের অংশে টুপির কোন টুকরা সংযোগের সেলাই দেখা যাবেনা। এই তরতীবে টুপি পড়া সুন্নত মুবারক।
সাতশত শহীদ উনাদের মর্যাদা লাভ
দায়েমীভাবে সুন্নতী টুপি পরিধান করলে ৭টি সুন্নত মুবারক আদায় হয়। যেমন-
১. টুপি চার টুকরা হওয়ার সুন্নত মুবারক
২. গোল হওয়ার সুন্নত মুবারক
৩. সাদা হওয়ার সুন্নত মুবারক
৪. সুতী কাপড় হওয়ার সুন্নত মুবারক
৫. মাথার সাথে লেগে থাকার সুন্নত মুবারক
৬. সেলাই পিছনে রেখে টুপি পড়ার সুন্নত মুবারক এবং
৭. দায়েমী টুপি পড়ার সুন্নত মুবারক।
সূতরাং সবসময় টুপি পড়ে থাকলে ৭টি সুন্নত মুবারক পালন অবস্থায় থাকা যায়।
এখানে গভীর চিন্তা ও ফিকিরের একটি বিষয় রয়েছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যিনি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে কোন একটা সুন্নত মুবারক উনাকে আঁকড়িয়ে ধরে রাখবেন, উনাকে একশত শহীদ উনাদের ছাওয়াব প্রদান করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
এখানে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, যদি ১টি সুন্নত মুবারক আকড়ে ধরলে একশত শহীদ উনাদের মর্যাদা লাভ করা যায়, তাহলে সুন্নতী টুপি পরিধান করা অবস্থায় ৭*১০০ = ৭০০ শহীদ উনাদের মর্যাদায় থাকা সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহ! আর এ অবস্থায় কেউ ইন্তেকাল করলে তিনি ৭০০ জন শহীদ উনাদের মর্যাদা নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার দিদার লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে দায়েমীভাবে সুন্নতী টুপি মুবারক পড়ে থাকার তৌফিক দান করুন এবং এই অবস্থায় ইন্তেকাল নসীব করুন। আমিন।
আপনার সুন্নতী টুপির চাহিদা পেশ করতে এই লিংকে ক্লিক করুন-
https://sunnat.info/sunnati-dresses/sunnati-cap