মহান রব তায়ালা উনার দীদারের আহ্বান এসেছে। সাইয়্যিদাতুনা উম্মু রসূলিনা হযরত আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র হায়াত মুবারকের অন্তিম ক্ষণ এসে উপস্থিত হয়েছেন। খুব শীঘ্রই তিনি নশ্বর ছেড়ে চলে যাবেন প্রিয়তম অবিনশ্বরের দিকে।
কিন্তু বুকে উনার পরম প্রিয় কলিজার টুকরো আওলাদ, যার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সমস্ত সৃষ্টিজগত। একদিন চিনবে উনাকে। এমন মুহাব্বত বিগলিত ক্ষনে তিনি রচনা করলেন প্রিয় আওলাদ, কুলকায়িনাতের নবী ও রাসূল, মানবজাতির যিনি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শান মুবারকে সেই অসামান্য কাব্যখানি যাকে আমরা বলি ‘নাত শরীফ’।
শুদ্ধ আরবী ভাষায় রচিত এই নাত শরীফ উনার মর্ম উপলব্ধির জন্য ‘মুবাশশিরাও ওয়া নাযিরা’ বইটিতে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের জন্য সংকলন করা হয়েছে বাংলা ভাবানুবাদ।
আমরা আশা করি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই অসামান্য ছানা-ছিফত পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে।
সাধারণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক বর্ননা করে যে সমস্ত কবিতা রচনা করা হয় সেগুলিকে পবিত্র না’ত শরীফ বলা হয়। এই রেসালার আলোচ্য না’ত শরীফ খানা রচনা করেছেন সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠা ব্যক্তিত্বা, আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি, আর তাই এই সুমহান না’ত শরীফ উনাকে “না’তু উম্মি রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” অথবা “সুমহান বিশেষ না’ত শরীফ” নামে অভিহিত করা হয়।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একমাত্র মহাসম্মানিত আওলাদ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে উনার সম্মানিত মামাগণ উনাদের সাথে সাক্ষাত করে মদীনা শরীফ হতে পুনরায় মক্কা শরীফ ফিরে আসার এক পর্যায়ে উনারা পবিত্র “আবওয়া” নামক এক স্থানে অবস্থান করেন। সেখানেই ১০ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ সকাল ৯-১০টার দিকে উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
প্রসিদ্ধ বর্ননা মতে, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার দুনিয়ার যমীনে বয়স মুবারক মাত্র ছয় বছর। সেই অন্তিম সময়ে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম তিনি উনার নূরী আওলাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোল মুবারকে নিয়ে উনার নূরানী চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে এই সুমহান না’ত শরীফখানা আবৃত্তি করেছিলেন।
উক্ত না’ত শরীফখানাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ায় অবস্থানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সকল শানের বর্ণনা করেন। যা থেকে সহজেই অনুধাবন হয় যে উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাপবিত্র মহাসম্মানিত আওলাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্পূর্নই জ্ঞাত ছিলেন, অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতময় ইলমে গায়িবে সমৃদ্ধ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এই না’ত শরীফ আজ হতে প্রায় পনেরশত বছর আগে রচিত, অথচ কিতাবাদীতে থাকা সত্ত্বেও এমন এক মহামূল্যবান রচনার অস্তিত্ব সম্পর্কে কজন অবগত ছিলো! না জানতো এর মহাপবিত্রতা ও রহমত-বরকত সম্পর্কে, না জানতো এর অতুলনীয় সমৃদ্ধ কাব্য শৈলী সম্পর্কে।
সুদীর্ঘ সময় পরে পঞ্চদশ হিজরী শতকের সুমহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম এবং যিনি ছহিবায়ে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম, বাহরুল উলূম, হাবীবাতুল্লাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনারা কুল কায়িনাতবাসীকে এই সুমহান না’ত শরীফ সম্পর্কে জানিয়েছেন। উনাদের সুমহান তাজদীদ মুবারকের মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ওয়ালিদাইন (পিতা-মাতা) আলাইহিমাস সালাম উনারা যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সরাসরি নিছবত প্রাপ্ত, উনারা যে মহান আল্লাহ উনার ইলমেই সমৃদ্ধ তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি উনারাই প্রথম এই ফিতনাবেষ্টিত সময়ে সমাজের সর্বত্র হারাম জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে এই সুমহান না’ত শরীফখানা পাঠের গুরুত্ব-তাৎপর্য, প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মুসলমানগণকে সচেতন করে যাচ্ছেন এবং এ সম্মানিত না’ত শরীফখানার আরবী ইবারত ও সঠিক অর্থ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সহকারে বিভিন্ন কিতাব সংকলনের উদ্যোগ নিয়েছেন। সে একই ধারাবাহিকতায় এই পবিত্র কিতাব প্রকাশিত হয়েছে এবং এর মধ্যে আরবী মূল না’ত শরীফখানা সহ এর বিভিন্ন কাব্যানুবাদও সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
এ সুমহান না’ত শরীফ পাঠের মাধ্যমে মহান আল্লাহপাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুল উম্মাহাত, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাদের সীমাহীন ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা, শ্রেষ্ঠত্বের স্মরণ হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ! উনাদের নিসবত-ক্বুরবত, রহমত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি হাছিল হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ! পাশাপাশি শরীয়তসম্মত ভাবে খুশিও প্রকাশ করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনাদের সুমহান সম্মানার্থে মহান আল্লাহপাক যেন আমাদের সকলকে এ সুমহান না’ত শরীফ উনার গুরুত্ব, তাৎপর্য মুবারক উপলব্ধি করার, মুহাব্বত ও আদবের সাথে পাঠ ও শ্রবণ করার তাওফিক দান করেন। আমীন।