তালবীনাহ এক প্রকার লঘুপাক খাদ্য।
তালবীনা শব্দটি লাবানুন (لَبَنٌ) শব্দ থেকে
এসেছে। অর্থাৎ তালবীনা একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। অসুখ বিসুখে রোগীকে সহজপাচ্য,
পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় পথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা
করা হয়। সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-শোকে তালবীনা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।
সাধারণত যবের আটার সাথে দুধ
মিশিয়ে তালবীনাহ প্রস্তুত করা হয়। সাথে মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন: মধু অথবা গুড়
অথবা চিনি মিশ্রিত করা হয়।
তালবীনাহ সম্পর্কে উদ্বৃত হাদীছ
শরীফসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
عَنْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّـهَا كَانَتْ
تَأْمُرُ بِالتَّلْبِيْنَةِ وَتَقُوْلُ هُوَ الْبَغِيْضُ النَّافِعُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তালবীনা খেতে আদেশ মুবারক করতেন এবং ইরশাদ মুবারক করতেন, এটি হল অপছন্দনীয়, তবে উপকারী।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: বাবুত তালবীনাতি লিল
মারীদ্ব: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৯০)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّـهَا
كَانَتْ تَأْمُرُ بِالتَّلْبِيْنِ لِلْمَرِيْضِ وَلِلْمَحْزُوْنِ عَلَى الْـهَالِكِ
وَكَانَتْ تَقُوْلُ اِنّـِيْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
يَقُوْلُ اِنَّ التَّلْبِيْنَةَ تُـجِمُّ فُؤَادَ الْمَرِيْضِ وَتَذْهَبُ بِبَعْضِ
الْـحُزْنِ.
অর্থ: “উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি কোন রোগীকে এবং কারো মৃত্যুজনিত শোকাহত ব্যক্তিকে তালবীনা খাওয়ানোর
আদেশ করতেন। তিনি বলতেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনাহ’ রোগীর হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে এবং
নানাবিধ দুশ্চিন্তা দূর করে।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: বাবুত
তালবীনাতি লিল মারীদ্ব: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৮৯)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমাস সালাম উনাদের কেহ মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ
করতেন তখন তিনি সালবীনা বানানোর নির্দেশ মুবারক দিতেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, এটি
অসুস্থ্য ব্যক্তির হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং হৃদপিন্ডের অসুস্থ্যতাকে এমনভাবে
সুস্থ্য করে,
যেমনিভাবে পানি দ্বারা মুখ ধোয়ার পর ময়লা দূর হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ)
তালবীনাহ ও ছারীদ:
তালবীনাহ ও ছারীদ একত্রে মিশিয়ে খাওয়া সম্মানিত সুন্নত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ
عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّـهَا كَانَتْ اِذَا
مَاتَ الْمَيِّتُ مِنْ اَهْلِهَا فَاجْتَمَعَ لِذَلِكَ النِّسَاءُ ثُـمَّ
تَفَرَّقْنَ اِلَّا اَهْلَهَا وَخَاصَّتَهَا اَمَرَتْ بِبُرْمَةٍ مِنْ تَلْبِيْنَةٍ
فَطُبِخَتْ ثُـمَّ صُنِعَ ثَرِيْدٌ فَصُبَّتِ التَّلْبِينَةُ عَلَيْهَا ثُـمَّ
قَالَتْ كُلْنَ مِنْهَا فَاِنِّـيْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ التَّلْبِيْنَةُ
مَـجَمَّةٌ لِفُؤَادِ الْمَرِيْضِ تُذْهِبُ بَعْضَ الْـحُزْنِ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে একজন
দীদারে ইলাহীতে প্রত্যাবর্তন করলেন (বিছাল শরীফ গ্রহণ করলেন)। মহিলাগণ
এসে সমবেত হলেন।
তারপর নিকট আত্মীয়গণ ও বিশেষ ঘনিষ্ঠ মহিলাগণ ব্যতীত বাকী সবাই চলে গেলেন। এমন সময় তিনি ডেগে ‘তালবীনাহ’ পাকাতে নির্দেশ দিলেন। তা পাকানো
হলো। এরপর ‘ছারীদ’ (গোশতের মধ্যে রুটি টুকরো করে দিয়ে তৈরী খাবার) প্রস্তুত করা
হলো এবং তাতে তালবীনা ঢালা হলো। তিনি বললেন, তোমরা এ থেকে খাও। কেননা, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনাহ’ রুগ্ন ব্যক্তির অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং শোক
দুঃখ লাঘব করে। (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামা‘য়াহ: বাবুত তালবীনাহ: হাদীছ শরীফ নং ৫৪১৭; মুসলিম শরীফ: কিতাবুস সালাম: বাবুত তালবীনাতু
মাজাম্মাতুন লিফুয়াদিল মারীদ্ব : হাদীছ শরীফ নং ২২১৬)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ حَضْرَتْ عَائِشَةَ الصّـِدِّيْقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ
صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِالْبَغِيْضِ النَّافِعِ التَّلْبِيْنَةِ يَعْنِي
الْـحَسَاءَ قَالَتْ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ اِذَا اشْتَكَىْ اَحَدٌ
مِنْ اَهْلِهِ لَـمْ تَزَلِ الْبُرْمَةُ عَلَى النَّارِ حَتّٰى يَنْتَهِيَ اَحَدُ
طَرَفَيْهِ يَعْنِي يَبْرَاُ اَوْ يَـمُوتُ.
অর্থ: “উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অপ্রিয় কিন্তু উপকারী বস্তুটি তোমরা
অবশ্যই গ্রহণ করবে। তা হলো তালবীনাহ অর্থাৎ হাসা (দুধ ও ময়দা সহযোগে
প্রস্তুত তরল পথ্য)। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত
হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে কেউ মারিদ্বী
শান মুবারক প্রকাশ করলে হাসা-এর পাতিল চুলার উপর থাকতো, যতক্ষণ
না রোগী শেহাতী শান মুবারক অথবা বিছালী শান মুবারক প্রকাশ না করতেন।” (ইবনে
মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৪৬)
তালবীনার উপকারিতা:
তালবীনাহ একটি পরীক্ষিত পথ্য। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা নিম্নোক্ত রোগ-ব্যাধিসমূহের শেফায় তালবীনার
আশ্চর্যজনক উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। যেমন-
১. হৃদরোগের প্রতিষেধক।
২. হৃদপিণ্ডের শক্তি বাড়ায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার রোধ করে।
৪. অ্যালজেইমার প্রতিরোধ
করে।
৫. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের
মাধ্যমে ডায়াবেটিকের ঝুঁকি কমায়।
৬. বিষন্নতা দূর করে
৭. কোলেস্টেরল কমায়
৮. পাকস্থলীর জন্য
স্বস্তিদায়ক
৯. কোষ্ঠকাঠিণ্যতা দূর করে
ফলে নিয়মিত ইস্তিঞ্জা হয় ইত্যাদি আরো অনেক উপকারিতা।
তালবীনা হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
উপাদান:
১. দুধ,
২. বার্লি
,
৩. মধু (মিষ্টি স্বাদের
জন্য),
৪. খেজুর
কুচি
প্রস্তুত প্রণালী (এক):
১. একটি পাত্রে চার টেবিল চামচ পরিমাণ বার্লি গুড়া নিতে হবে
২. এরমধ্যে এক কাপ দুধ ঢেলে
দিতে হবে এবং ভালভাবে নাড়তে হবে যেন ভালোভাবে মিশে যায়
৩. ৩ মিনিট ওভেনে
গরম করতে হবে অথবা
চুলায় দিয়ে নাড়তে হবে
যেন জমাট না হয়ে
যায়
৪. মিশ্রণটি কিছুটা
ঘন হওয়ার পর
মিষ্টি স্বাদের জন্য হালকা মধু দেয়া
যেতে পারে
৫. সবশেষে খেজুর
কুচি করে কেটে উপরে
ছিটিয়ে দিলেই তালবীনা প্রস্তুত
প্রস্তুত প্রণালী (দুই):