কাঠ বাদাম (বৈজ্ঞানিক নাম: Terminalia catappa) একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ। বীজের নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় Combretaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ। এ গাছের রসালো ফলের অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বীজ থাকে যা পরিপক্ব ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়। এই বিচিগুলিই কাঠবাদাম নমে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধ যুক্ত। কাঠ বাদাম সারা বিশ্বে ভারতীয় বাদাম নামেও পরিচিত।
বাদামের বিভিন্ন ব্যবহার
- ভেজানো বাদাম খাওয়া হৃদয়কে সুস্থ রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দেয় এবং ভাল কোলেস্টেরল বাড়ায়।
- ভেজানো বাদাম খেয়ে এতে উপস্থিত ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসাবে কাজ করে। বাদামে উপস্থিত এই উপাদানটি বার্ধক্যজনিত ও প্রদাহকে বাধা দেয় যা ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির কারণে ঘটে।
- প্রতিদিন বাদাম খাওয়া ওজন হ্রাস, কোমর চিকিৎসা হ্রাস এবং স্থূলত্ব প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এটি তাত্ক্ষণিক প্রাক-জৈবিক স্বাস্থ্যের কারণে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে হজম স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত সেবন করলে বাদামের স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মলদ্বার ক্যান্সার এবং কোলনের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব রয়েছে।
- বাদাম খাওয়া হাড়ের ভর ও ঘনত্ব হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।
- বাদামের সবচেয়ে উপকারিতা মস্তিষ্কে উন্নতি তে রয়েছে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার সাথে সাথে আপনার জ্ঞান এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতেও সহায়তা করে।
কাঠ বাদামের উপকারিতা:
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই বাদামে থাকে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৪-৬ টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতি ঘটে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকারী ফ্যাট উৎস হিসেবে কাঠবাদাম বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য কাঠবাদাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এছাড়া এতে আলঝেইমার হবার সম্ভাবনাও কম।
- ক্যানসার প্রতিরোধে
কাঠবাদাম কোলোন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি কোলনকে ভালো রাখতেও কাজ করে।
- হার্টের সুস্থতায়
নিয়ম করে ভেজানো বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। কারণ কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান থাকে। যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন-ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি অ্যার্টারিকে ক্ষতিকর প্রদাহের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং ৫০% হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
কাঠবাদাম ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় বলা হয়, খাবারের পর কাঠবাদাম খাওয়া ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক
বাদাম খাওয়ার পর খিদে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে
কাঠবাদাম শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। প্রতিদিনের ডায়েটে বাদামের অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে অন্দরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণ মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, থাকে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডও। কিন্তু কোনরকম ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা কম থাকে।
কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
- হাড় ও দাঁত ভালো রাখে
কাঠবাদামে থাকা ফসফরাস, মিনারেল ও ভিটামিন হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষা দেয়। ফসফরাস কেবল হাড় ও দাঁত কে মজবুত করে না বরং এটি অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধও সাহায্য করে। হাড় ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য ও স্থায়িত্বের ওপর ফসফরাস এর প্রভাব রয়েছে অনেকখানি। বয়স জনিত হাড় ও দাঁতের সমস্যার তৈরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেও ফসফরাস বেশ কার্যকরী।
- পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
বাদামে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
বাদামের ফাইবার শরীরের জন্য উপকারী। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।
- কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যাতে কোনও ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর এর কোনও প্রভাব পরে না। কাঠবাদাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
- শক্তি বাড়ায়
প্রতিদিন একমুঠো কাঠবাদাম খাওয়া শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও রিবোফ্লাবিন শরীরে শক্তি জোগায়। এটি বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে হতেও সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঠবাদাম অ্যালকেলাইন সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-ই রয়েছে অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়।
দৈনিক কী পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত?
কাঠ বাদামে ৮০শতাংশ চর্বি আছে। চর্বি হজম হতে অনেক সময় লাগে। বেশি পরিমাণে খেলে বদহজম, পেট ফাঁপা এমনকি ডাইরিয়াও হতে পারে। প্রতিদিন ৫-১০টা কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
আন্তর্জাতিক সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে উন্নত মানের কাঠ বাদাম পাওয়া যায়।